ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

৪ দিনেও সংস্কার হয়নি সাতক্ষীরার আশাশুনি নদীর বেঁড়িবাধ 

পানিতে প্লাবিত ১০ গ্রাম
৪ দিনেও সংস্কার হয়নি সাতক্ষীরার আশাশুনি নদীর বেঁড়িবাধ 

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ গত চার দিনেও সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গত দুই দিন ধরে রিং বাধ দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃক নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন সেখানে জিও ব্যাগের মধ্যে বালু ভরে বিকল্প রিংবাধ দেয়ার চেষ্টা করছেন। যা তদারকি করছেন সেনাবাহিনীর একটি টিম। তবে, ইতিমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা দ্রুত বেঁড়িবাধ সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন।

ইতিমধ্যে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি। প্লবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের বর্তমানে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। বেঁড়িবাধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। গরু-ছাগল, হাস, মুরগিসহ গৃহস্থলির জিনিস পত্র নিয়ে রয়েছেন নিদারুন কষ্টে।

স্থানীয়রা জানান, গত ৩১ মার্চ ঈদের দিন সকাল ৯টার দিকে ঈদের নামাজ শেষে পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রায় দুই’শ ফুট এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ হঠাৎ করেই খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা আনুলিয়া ইউনিয়ন ব্যাপী। মুহুর্তের মধ্যে গ্রামবাসীর ঈদের আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয়। হাজার হাজার স্থানীয় গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গত দুই দিনে দফায় দফায় ভাঙ্গন পয়েন্টে বিকল্প রিংবাধ নির্মাণের প্রাণপণ চেষ্টা চালালেও তা জোয়ারের তোড়ে ব্যর্থ হয়। ইতিমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে আনুলিয়া ইউনিয়নের ১২’শ পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ। পানিতে ভেসে গেছে চারশতাধিক মৎস্য ঘেরের প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমি এবং ৭ থেকে ৮’শ বিঘা ফসলি জমি। বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক কাঁচাঘর বাড়ি। বিদ্যুত বিহীন রয়েছে সেখানকার তিনটি গ্রাম। প্লাবিত এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির অভাব। একইসাথে মানুষের রান্না-খাবার, হাঁস-মুরগী ও গো খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। বানভাসি মানুষ পার্শ্ববর্তী আশ্রয়কেন্দ্র ও পাউবো'র বাঁধে খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়ী চলে গেছেন। তবে, পানি বন্দী মানুষের মাঝে কিছু যুবককে শুকনা খাবার সরবরাহ করতে দেখা গেছে। ইতিমধ্যে পানিতে প্লাবিত হয়েছে আনুলিয়া ইউনিয়নের নয়াখালী, বিছট, বল্লবপুর, বাসুদেবপুর, আনুলিয়া, চেচুয়া, কাকবাশিয়া, মীর্জাপুর, চেউটিয়াসহ আশপাশের ১০ গ্রাম। দ্রুত বেঁড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে আনুলিয়া ইউনিয়নসহ পাশ^বর্তী খাজরা ও বড়দল ইউনয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।

তবে, আজ বুধবার সকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃক নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন গেটবল (বালিতোলা কার্গো) দিয়ে বালি তুলে জিগ ব্যাগে ভরে সেখানে রিংবাধ দিয়ে পানি ঠেকানোর প্রাণপন চেষ্টা করছেন। যা তদারকি করছেন সেনাবাহিনীর একটি টিম।

এদিকে, মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মোস্তাক আহমেদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা অঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সৈয়দ শহিদুল আলম, পানি উন্নয়ন বোর্ড-সাতক্ষীরা-১ এর নির্বাহি প্রকৌশলী মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, আশাশুনি উপজেলা নির্বাহি অফিসার কৃষ্ণা রায়, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুসসহ স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতৃবৃন্দ ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক ও পানিউন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা দ্রুত বেঁড়িবাধ সংস্কারের আশ্বাস দেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ার পেছনে অন্যতম কারন হচ্ছ অবৈধভাবে বেঁড়িবাধের তলা দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে গেট সিস্টেম করে মৎস্য ঘেরে পানি তোলা। তারা অবিলম্বে এই পদ্ধতি বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় বিএনপি নেতা এসএম শওকত হোসেন জানান, ঈদের নামাজ পড়ার সময় তারা জানতে পারেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিছট গ্রামের ঝুকিপূর্ণ বাঁধটি ধসে গ্রামের মধ্যে পানি ঢুকছে। তাৎক্ষনিক তারা সেখানে গিয়ে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর থেকে কয়েক দফায় গত দুই দিন ধরে সেখানে হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাধ সংস্কারের চেষ্টা করেও তারা পানি ঠেকাতে পারেননি। ইতিমধ্যে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানিতে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ভেসে গেছে চার শতাধিক মৎস্য ঘেরের হাজার হাজার বিঘা জমি। তলিয়ে গেছে ৭/৮’শ বিঘার বোরো ধান ও ফসলি জমি। বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি। বিদ্যুত বিহীন রয়েছে সেখানকার তিনটি গ্রাম। বাড়িঘর ছেড়ে তিন শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র। অনেকেই বাড়িঘর ছাড়ার প্রস্ততি নিচ্ছেন।

আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস জানান, ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, ইউএনও, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

বুধবার সকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃক নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন সেখানে জিও ব্যাগের মধ্যে বালু ভরে বিকল্প রিংবাধ দেয়ার চেষ্টা করছেন। যা তদারকি করছেন সেনাবাহিনীর একটি টিম।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ জানান, ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জরুরিভাবে বেঁড়িবাধ সংস্কারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে ঈদের কারণে শ্রমিক সংকট ও বালু বোর্ড আনতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে একটু বিলম্ব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগকে একত্রে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব বাঁধ মেরামত করা হবে।

বেঁড়িবাধ,নদী,আশাশুনি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত